চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া মতিউর বেঁচে আছে,

🏠|সারাদেশ | ১৯ মে ২০২৫ সোমবার |৯:১০:পিএম

👤|স্টাফ করেসপন্ডেন্ট|দৈনিক স্বপ্নের পৃথিবী নিউজ| মাদারীপুর ঢাকা বাংলাদেশ|

চুরি নয়,পাওনা টাকা চাওয়ায় ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া হয় মতিউরকে দাবী পরিবারের 


বগুড়ার আদমদীঘিতে চলন্ত ট্রেনের দরজার বাহির থেকে ঝুলিয়ে ফেলে দেওয়া হয় মতিউর রহমান (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে। তিনি ট্রেনের নিচে পড়লেও প্রাণে বেঁচে যান। এরপর মুহূর্তেই ৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 


ভিডিওতে ভাইরাল মতিউরের বাড়ি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল গ্রামে।


অনেকেই তাকে চোর এবং ছিনতাইকারী বলছেন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মতিউরের পরিবারের সদস্যরা। 

এর আগে রবিবার (১৮ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়া থেকে সান্তাহার অভিমুখী উপজেলার নসরতপুর স্টেশনে একটি কমিউটার ট্রেনে ঘটনাটি ঘটে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতিউর রহমান পেশায় একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন।


দুই বছর ধরে দূতাবাস এবং এজেন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কাজ করছেন। গত ২০ দিন আগে উপজেলার তালশান গ্রামের হেলালের ছেলে সজীব হোসেনকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন। সৌদি আরবে গিয়ে সজীবের বৈধ কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় তার পরিবারের সদস্যরা ৭-৮ দিন আগে মতিউরের বাড়িতে গিয়ে কাগজপত্রের বিষয়ে জানতে চান। 

এ নিয়ে সেখানে ঝামেলার সৃষ্টি হয়।



এরই জের ধরে বগুড়া থেকে আসা ট্রেনে মতিউরকে একা পেয়ে সজীবের ছোট ভাই রাকিব এবং সজীবের শ্যালকরা মিলে মোবাইল চোর এবং ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে তাকে ট্রেন থেকে ফেলে দেন এবং তার কাছে থেকে ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগ মতিউরের পরিবারের।

ভুক্তভোগী মতিউর রহমানের ছেলে আহসান হাবিব বলেন, ‘আমার বাবা এখন পর্যন্ত ৩-৪ জনকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন। তারা সে দেশে ভালো আছেন। গত ১৫ দিন আগে আমার বাবা আদমদীঘি উপজেলার তালশন গ্রামের হেলালের ছেলে সজীব হোসেনকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন। সৌদি আরবে পাঠানো বাবদ তার কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নিয়েছেন।


কিন্তু সেখানে গিয়ে বৈধ কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় গত ৭-৮ দিন আগে সজীব তার বাবাকে আমাদের বাড়িতে পাঠানে। তিনি এসে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে যান। এরই জের ধরে বগুড়া থেকে ট্রেনে বাড়িতে ফেরার পথে সজীবের ছোট ভাই রাকিব এবং সজিবের শ্যালকরা আমার বাবাকে মোবাইল চোর বলে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

এ সময় বাবা খুব কষ্ট করে প্রায় ৪-৫ মিনিট ট্রেনের সঙ্গে ঝুলে ছিলেন। বাবার কাছে ব্যাবসায়িক কাজের ৫০ হাজার টাকা ছিল সেটিও তারা কেড়ে নেন। এক পর্যায়ে ট্রেনটি উপজেলার নসরতপুর স্টেশনে পৌঁছলে প্লাটফর্মের সাথে ধাক্কা খেয়ে আমার বাবা ট্রেনের নিচে পড়ে যান। ট্রেনের নিচে পড়লেও বাবা কোনো রকম প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু সেখানকার উৎসুক জনতা বাবাকে মোবাইল চোর এবং ছিনতাইকারীভেবে বেধড়ক মারধর করতে থাকে। পরে বাবাকে কোনো রকম সেখান থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। এরপর বিষয়টি অবগত করতে সান্তাহার রেলওয়ে থানায় গেয়ে তারা বলেন, ‘আপনার বাবা জীবিত রয়েছে। মারা গেলে মামলা নেওয়া যেত।’


উপজেলার কুসুম্বী গ্রামের হাসান নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি মতিউরকে দীর্ঘদিন থেকে চেনেন। তার মাধ্যমে দুই আত্মীয়কে বিদেশে পাঠিয়েছেন। একজন সৌদি আরবে এবং আরেকজন মালয়েশিয়াতে আছে। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। মতিউরের সঙ্গে লেনদেন নিয়ে কখনো কারো ঝামেলা হতেও দেখেননি তিনি। একই রকম কথা জানালেন নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ।


এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে রাকিব হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।


জানতে চাইলে সজীবের বাবা হেলাল বলেন, ‘প্রায় এক মাস আগে মতিউরের মাধ্যমে চার লাখ ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেলে সজীবকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত মতিউর আমার ছেলেকে কোনো কাজ দিতে পারেননি। এ নিয়ে তার সঙ্গে অনেকবার দেখা করতে চেয়েছি। সে আমার সঙ্গে দেখা না করে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে বেড়াচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে ছেলের সম্পর্কে জানতে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে কোনো ঝামেলা হয়নি।’


মতিউরকে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার ব্যাপারে ছেলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বগুড়া থেকে আসার সময় সজীবের শ্যালকরা ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে মতিউরকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে রাকিব সেখানে কিছুই করেনি। ট্রেনে কী হয়েছে সেই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’


আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি রেলওয়ে থানা এলাকার মধ্যে। এ জন্য এটি রেলওয়ে পুলিশের বিষয়। তাই আমরা কোনো অভিযোগ নিইনি।’


সান্তাহার রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান হাবিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তারা থানায় এসে সেন্ট্রির সঙ্গে কথা বলে চলে গেছেন। তখন আমি ছিলাম না। এখনো যদি তারা অভিযোগ করেন তাহলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটিই আমাদের কাজ। যদি কেউ বলে অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে না, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।


তা ছাড়া এ ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেখান থেকে বিষয়টি জানলাম। ওই স্টেশন থেকেও কেউ আমাকে বিষয়টি জানাননি।’


(তথ্য - কালেরকন্ঠ)


দৈনিক স্বপ্নের পৃথিবী নিউজ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মেহেদী হাসান
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ডাকসু নির্বাচন: কে হবেন ভিপি, কে হবেন জিএস? জানা গেলো সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম

জাতীয় নাগরিক কমিটি মাদারীপুর জেলা শাখার ৫৩৭ নং সদস্য আরাফাত খান গ্রেফতার