শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরা ছবি নিয়ে বিতর্ক: পুলিশ বলছে ‘এআই’ দিয়ে তৈরি, ফটো সাংবাদিকরা বলছেন ‘রিয়েল’

 


প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম এক শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরেছেন—এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ বলছে, ছবিটি ‘এআই জেনারেটেড’, বাস্তব নয়।

অন্যদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক ফটো সাংবাদিক এবং গণমাধ্যম ছবিটির সত্যতা প্রমাণ করেছেন। ফলে পুলিশের দাবি ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

পুলিশের বক্তব্য


বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছবিটি এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে, জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে। ডিএমপির দাবি—ছবিটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে স্পষ্ট হয় যে এটি বাস্তব কোনো ঘটনার প্রতিফলন নয়, বরং এআই দিয়ে বানানো। এ অভিযোগের নিন্দা জানিয়ে সাধারণ মানুষকে ‘ভুল প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হতে’ আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ।

সাংবাদিকদের কথা


চারটি ভিন্ন সংবাদপত্রের ফটো সাংবাদিক জানিয়েছেন, তারা প্রত্যক্ষভাবে ঘটনাস্থল থেকে ছবিটি তুলেছেন।

মুখ চেপে ধরার ওই ছবি বৃহস্পতিবার প্রথম পাতায় ছেপেছে দৈনিক মানবজমিন, ছবিটি তুলেছেন পত্রিকাটির ফটো সাংবাদিক আবু সুফিয়ান জুয়েল। ওই ছবিতে মুখ চেপে ধরে কিছুটা ঝুঁকে থাকার ভঙ্গিতে রয়েছেন দুজনই। তিনি বলেন, “ভাই, আমার ছবিই সাক্ষী। আমি নিজ হাতে তুলেছি।”


বাংলাদেশ প্রতিদিনের ফটো সাংবাদিক জয়ীতা রায় ফেইসবুকেও ছবিটি শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, ছবিটি ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড়ে আবু সাঈদের নামে যে হাসপাতালটি করা হয়েছে, তার সামনে থেকে তোলা বুধবার দুপুর ২টার দিকে। শিক্ষার্থীদের মিছিলটিকে ঠেকাতে না পেরে পুলিশ যখন জলকামান, টিয়ার শেল ছোঁড়া শুরু করে, তখন ওই পুলিশ কর্মকর্তা পেছন থেকে এক বিক্ষোভকারীকে জাপটে ধরার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে সামান্য ধস্তাধস্তির মত হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘটে যায় সেই ঘটনাটা। পরে অবশ্য অন্য বিক্ষোভকারীরা এসে সেই ছেলেটিকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। 


ডেইলি স্টারের ফটোগ্রাফার অর্কিড চাকমা বলেন, “তখন আমার আশপাশে আরও কয়েকজন ছিলেন, যারা ছবিটা তুলেছেন। এটা এআই জেনারেটেড হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

”ফ্যাক্ট-চেক বিশ্লেষণ


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী ছবিটি বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি ‘সাইট ইঞ্জিন’সহ ছয়টি টুলসে যাচাই করে দেখেন—ছবিটি এআই জেনারেটেড নয়।


তিনি বলেন, পুলিশের দাবির কোনো প্রযুক্তিগত ভিত্তি নেই। “এআই জেনারেটেড ছবি শনাক্ত করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো মেটাডেটা এনালাইসিস। পুলিশের মধ্যে এমন দক্ষতা নেই বলেই আমার মনে হয়।”


এই ছবি নিয়ে বিতর্কের কারণ হলো গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময়ও শাহবাগ থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা আন্দোলনকারীর মুখ চেপে ধরেছিলেন। সেই ছবিটি তখন কণ্ঠরোধের প্রতীক হয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তাই এবারও একই রকম দৃশ্য ধরা পড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—“পুলিশ কি আবারও কণ্ঠরোধের প্রতীকী দৃশ্য তৈরি করছে?”


শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া


বুধবার শাহবাগে সংঘর্ষের সময় পুলিশের লাঠিপেটা, টিয়ার শেল ও জলকামান ব্যবহারের ছবি–ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলমের শাস্তির দাবি তুলেছেন।তীব্র সমালোচনার মুখে বুধবার রাতেই শাহবাগে গিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া মতিউর বেঁচে আছে,

ডাকসু নির্বাচন: কে হবেন ভিপি, কে হবেন জিএস? জানা গেলো সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম

জাতীয় নাগরিক কমিটি মাদারীপুর জেলা শাখার ৫৩৭ নং সদস্য আরাফাত খান গ্রেফতার