পদ্মা ও যমুনা নদীর মোহনায় ধরা পড়লো ২৫ কেজি ওজনের মহাবিপন্ন বাগাড় মাছ
![]() |
| ছবি: সংগৃহীত |
পদ্মা ও যমুনা নদীর মোহনায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে আন্তর্জাতিকভাবে মহাবিপন্ন তালিকাভুক্ত ২৫ কেজি ওজনের বাগাড় মাছ। বিপন্ন হলেও শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট বাজারে প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি হয় বাগাড় মাছটি।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী ৪০ হাজার টাকায় মাছটি কিনে ৪২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবীরা জানান, আজ ভোরে পদ্মা ও যমুনা নদীর মোহনায় স্থানীয় ব্যক্তিদের পাশাপাশি পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ অঞ্চলের জেলেরা মাছ শিকারে নামেন। রাজবাড়ী জেলার সীমান্তবর্তী পাবনার ঢালারচর এলাকায় স্থানীয় জেলে শাজাহান শেখ ও আক্কাছ শেখ যৌথভাবে জাল ফেলেন। জাল ফেলে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর জালে বড় ধরনের ঝাঁকি দিলে বুঝতে পারেন বড় কিছু আটকা পড়েছে। জাল গুটিয়ে নৌকায় তুলে তাঁরা দেখতে পান বড় একটি বাগাড় মাছ। সূর্য ওঠার পরপরই জেলেরা বাগাড়টি বিক্রি করতে আসেন দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে।
এ সময় দেলোয়ার সরদারের আড়তে বাগাড়টি তোলার পর ওজন নিয়ে দেখেন প্রায় ২৫ কেজি। বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হলে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী শাহজাহান শেখ সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে কেনেন।
শাহজাহান শেখ জানান, নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে তিনি ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজিতে ২৫ কেজির বাগাড়টি প্রায় ৪০ হাজার টাকায় কেনেন। এ সময় দৌলতদিয়া ঘাটে মাছ কিনতে আসা ফরিদপুরের বাসিন্দা কালাম মণ্ডল কেজিতে ১০০ টাকা করে লাভ দিয়ে ৪২ হাজার ৫০০ টাকায় বাগাড়টি কেনেন।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের তালিকা অনুযায়ী, বাগাড় একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী বাগাড় শিকার, ধরা ও বিক্রি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ আইনকে উপেক্ষা করে রাজবাড়ীতে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে বাগাড় শিকার এবং নিলামে বিক্রি অব্যাহত আছে। বিশেষ করে দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে প্রতিদিন সকালে পদ্মা ও যমুনা নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সঙ্গে মহাবিপন্ন প্রাণী বাগাড় বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাছ বাজার থেকে দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দূরত্ব মাত্র ১০০ গজের মতো হবে।
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব উল হক বলেন,‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে বাগাড় শিকার নিষিদ্ধ। কিন্তু মৎস্য সংরক্ষণ আইনে বাগাড় নিষিদ্ধের কথা বলা নেই। অন্য দপ্তরের আইন সম্পর্কে আমাদের মৎস্য বিভাগের করণীয় কিছুই নেই।’
এ ক্ষেত্রে জেলেদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা যায় কি না এ প্রশ্নের জবাবে মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের বিষয়। মৎস্য অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই।’
সম্প্রতি দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক ত্রিনাথ সাহা বলেন, ‘বাগাড় শিকার ও বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। মাইকিং করে জেলে ও ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে।’

মন্তব্যসমূহ